অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : মাদকের আমদানী, ক্রয়-বিক্রয় ও সেবনের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অ ল। হাত বাড়ালেই মেলে মরণ নেশা হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল। গাঁজার তো কথাই নেই !
গোয়েন্দা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বেনাপোল-খুলনা থেকে যশোর হয়ে গোপালগঞ্জের মধ্য দিয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট মহাসড়ক ধরে গৌরনদী হয়ে মাদকের চালান পৌঁছে যায় বরিশাল বিভাগীয় শহরসহ দক্ষিা লীয় জেলাগুলোতে। এই রুটের নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে পয়সারহাট ও এর আশপাশ এলাকাকে। পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে দু’একজন গাঁজা বিক্রেতা ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করলেও মূল হোতাদের গ্রেফতারে তৎপর না হওয়ায় কোন ভাবেই মাদকসেবীদের অদম্য উন্মাদনা রোধ করা যাচ্ছেনা বলে উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সুধীসজ্জনরা অভিযোগ করে আসছেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন চরম উদ্বিগ্ন। পুলিশ বলছে আইনী তূর্বলতার জন্যই বেশী দিন তাদের আটক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঈদকে সামনে রেখে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খুচরা মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের সাজা প্রদান করলেও তারা এতটুকু দমেনি। চলতি বছরে পয়সারহাটে ইয়াবার একটি চালানসহ এপিবিএন সদস্যরা একজনকে আটক করলেও তার দেয়া স্বীকারোক্তি মতে মূল হোতার নাম জানা গেলেও মামলা থেকে অজ্ঞাতকারণে বাদ দেয়া হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতেও এবছর কোন মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার হয়নি।
জেলা পুলিশ বিশেষ শাখার সর্বশেষ তালিকানুয়ায়ি, উপজেলায় পাইকারী গাঁজা, পেন্সিডিল ও ইয়াবা বিক্রেতার সংখ্যা ৩৮ জন। এদের মধ্যে শিবির, বিএনপি নেতা থেকে ক্ষমতাসীন দলেরও লোকজনের নাম রয়েছে। ২০১৪ সনে ওই তালিকায় বিক্রেতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২জনে।
সূত্র মতে, এলাকায় নৌ-ডাকাত, রোড ডাকাত, ট্রান্সফরমার চোরের তালিকায় নাম রয়েছে ২১ জনের। তালিকাভুক্ত ২১ জনের সকলের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকায় রয়েছে ৩০ জন। তবে গোয়েন্দা তালিকাভুক্ত কাউকেই পুলিশ সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যে গ্রেফতার করেনি। সম্প্রতি দেশব্যাপী পুুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে আগৈলঝাড়ায় পুলিশের তালিকাভুক্ত উল্লেখযোগ্য কোন সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা, চাঁদাবাজ গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভেরও কমতি নেই। বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত কয়েকজনকে গ্রেফতারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল আগৈলঝাড়া পুলিশের নিস্ফল সাঁড়াশি অভিযান।
জেলায় মাদক বিক্রি ও সেবনের কয়েকটি চিহ্নিত স্পট হচ্ছে- গৈলা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড, কালীখালা, পয়সারহাটের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের ভ্যানস্ট্যান্ড, বাগধা, পাকুরিতা স্কুল এলাকা, জোবারপাড়-নাঘিরপাড়ের ব্রিজ ও স্কুল এলাকা, বড়মগরার উত্তরপাড়, আস্কর বাঁশতলা, চক্রীবাড়ি, কান্দিরপাড়, ছয়গ্রাম বন্দর, মিশ্রিপাড়া হাট ও স্লুইজগেট, কালুরপাড়, সাহেবেরহাট, মাগুরা বাজার, ভালুকশী, রাজিহার, বাশাইল, পূর্ব সুজনকাঠী, রামেরবাজার, বাটরা, রামানন্দেরআঁকসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মাদকবিক্রি ও সেবন চলছে। উপজেলার কালীখোলার কয়েকটি মুদী দোকানেও পাওয়া যায় মাদক। এসব দোকানে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের কাছেই কেবল মাদক বিক্রি হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, টেকেরহাটে পুলিশী চেকপোস্ট বসার কারণে মাদক পাচারকারীরা আগৈলঝাড়ার আশেপাশে কোন চেকপোস্ট না থাকায় পয়সারহাট ও গুচ্ছগ্রাম এলাকাকে অধিক নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে। এ রুটের ব্যবসায়ীরা ত্রিমুখী ও আমবৌলা খেয়াঘাট দিয়ে মাদকের বড় চালান পার করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও রামশীল থেকে রাজিহার-চাঁদশী হয়ে গৌরনদী ও রাজিহার থেকে ঘোষেরহাট রুট ব্যবহার করছে। ঘোষেরহাট ঠাকুরবাড়ি মাদকের অন্যতম একটি বড় বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ওই এলাকার বিক্রেতারা বাশাইল ওয়াপদা রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রির স্পট গড়ে তুলেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গৌরনদী সার্কেল অফিসার ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ঈদ উপলক্ষে পয়সারহাটে পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। মাদকের ব্যাপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। মাদক বিক্রেতাদের তালিকা তৈরী করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই অভিযানে পরিচালনা করা হচ্ছে।